Wednesday, 29 February 2012

ঘেঁটুকেন্দ্রিক ফাল্গুন এবং শিবারা

১.
বাউনাডোবার পাড়ে সারবাঁধা ঘেঁটুপাতারা নি:শব্দে পাঠ সারে আবহাওয়ার ফ্যাক্সবার্তা ; অথচ বাতাস ছড়িয়ে দিলে ফুলের পাপড়ি বা রেণু, শিবাদের দিনবিধির মতোই স্থির জলে পাক খায় নির্দ্বিধায় ; শিবারা পাক খায় -- সারাদিন শস্যক্ষেত সন্ধ্যায় মদের দোকান, রাতে কাঁটাবন নয়তো ...


২.
স্কুল ফিরতে যারা কোকিলডাক নকল করে কোকিল রাগায় তাদের কোনো খবর নেই বধির ঘেঁটুপাতার কাজে; যেসব ঠোঁট নামতা পড়ে, সে ঠোঁটেই গালাগালি, সে ঠোঁটেই হিন্দি ছবির গান, সে ঠোঁটেই কোকিলভ্যাঙানো অথচ সেইসব ঠোঁট কখনোই ...


৩.
ঘেঁটুগন্ধ নাকে আসলে মেয়েবৌরা নতুন খোলায় চাল কলাই  ভাজে আর পুরানো খোলাটিকে সযত্নে তুলে রাখে সংক্রান্তির জন্য, আবার মন্ত্রেতন্ত্রে ...


৪.
এবাড়িতে টেলিফোন বাজলে, থামে কলাইয়ের কড়মড় আওয়াজ ছোটো সুভাষের মুখে, গামছাবাঁধা চালভাজার ভেতর হাত পুরে চুপচাপ শব্দ শুনে, ও নাকি কানপেতে থাকে অর্জুনআড়ি রেশনদোকানে গেলে, যেখানে জনচেতনা কেন্দ্রের নাম করে ফণী কেরোসিন তেল তুলে, আর সে কেন্দ্রে চিরকাল তালা লাগিয়ে ...


৫.
বাউনাডোবার একপাড়ে ঘেঁটুপাতারা বধির নয় অন্ধ নয় তাই তারা কালার টিভি দ্যাখে, ফ্যাক্সবার্তা পড়ে অথচ অপর পাড়ে রাত্রি নামলে শিবা তার বৌকে মারধোরের কান্না শোনায়, আর একটু পার হলে দেখা যাবে কারেন্টের আলোয় মদের আড্ডা অথচ শিবাদের সামনের বাড়িতে লন্ঠনের আলোর থেকে বি.এ. পাঠরতা নন্দিতার কণ্ঠস্বর স্পষ্ট; আলোর জন্য কতবার ...


৬.
যে কোনো ফাল্গুন সংক্রান্তির সকাল কাচ্চাবাচ্চাদের টেনে নিয়ে যাবে এই গ্রাম্য কাঁচা রাস্তা ধরে, যে যে মোড়ে ঘেঁটুবুড়ির বন্দনা বা মাথাভাঙা হয়, নিষ্প্রয়োজন তোমাদের বি-টেক্স লোশন, আসলে অনগ্রসররা চিরটাকালই রামধনুর নীচে, তোমরা সার্টিফিকেটের হাত ধরে এগিয়ে যাও... এখানকার বুড়িরা বাঁশের লাঠি নিয়ে প্রস্তুত থাকবে খোস প্যাঁচড়া দাদের ছ্যাঁচড়ামো দূর করতে, এখানে রাজনীতির দীর্ঘবক্তৃতা আছে -- আর কিছুই নেই, ডোবার পাড়ে গেলেই আমি ওপাড় বা এপাড় নই, তবু একদিকের ঘেঁটুপাতা ফ্যাক্সবার্তা পড়বে, আর একদিকের ..

প্রাণস্পন্দনরেখা

অন্য কোনো পাহাড় নয়, আমাদেরই মতো সাদামাটা হাঁটাচলার ভেতর শায়িত যে দুপুর, তারই স্বপ্নসব পাহাড়ের মতো খুঁজে বেড়ায় ছাদ; পুষ্ট কিংবা অপুষ্ট যাইহোক, তবুও যারা ছাদের নীচে বাস করি, তাদের টুপুর টাপুর দু:স্বপ্নের থেকে একের পর এক খসে পড়ে রোদ্দুর, আমার স্বাসপ্রশ্বাস ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় জানালার বেশ কয়েকটি বর্গাকার শূন্যতা বা নীলাভ সাদা, হয়তো এ আকাশ ভাত ঘুমেরও শেষে অলস দাঁতে দাঁত ছুঁয়ে সরে যায় একটু একটু করে আরো; ( বিজ্ঞাপন বিরতি: আধঘুম আর অলস সন্ধ্যা, বাকপ্রতিমা-একুশ ) আমাদের সকালের সমস্ত দাহ্য পদার্থ অনেক আগেই ঘুমের পর্ব সেরে এখনো পিঁচুটি চোখে চেয়ে থাকে কালো চুলের কার্পেটের দিকে, যেখানে আঁকা হয়ে যায় প্রাণস্পন্দন রেখা, সেইসব রেখার ...


নুড়ি পাথরে পরিপূর্ণ মন কুমিরের মতো পাহাড়ের কাছাকাছি আসে আর ফিরে যায়; ফিরে যায় আমাদেরই মতো সাদামাটা হাঁটাচলা, কচি কলাপাতায় রাখা খিচুড়ির মতো মনের পর্দা ফুটো করে কারো গন্ধ   

শিরোনাম নেই

বেনেবউ আর ধুলোর পাহাড় আজ অনেকটা দূর, ডট কমের আত্মীয়তা বলতে ঘাসের থেকে শিশির গড়িয়ে পড়াও হতে পারে কিংবা তা নয়, তবুও ঢোক গিলে কেউ কেউ ( বিজ্ঞাপন বিরতি: রাতকানা আর চাঁদরঙ নিয়ে, এখন নিদাঘ ) বলে উঠবে চমকাইতলার রুপকথা, আমাদের বেনেবউরা মুখস্ত করে তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ, ওয়াহাবি আন্দোলন কিংবা সংবাদ প্রভাকর বা তত্ত্ববোধিনীর প্রতিষ্ঠাতাদের ইতিকথা, ঘাসেরা নীল এবং নীল, পাশাপাশি কয়েকটা পিঁপড়ে যখন অগ্রগতির লাশ বয়ে নিয়ে যায়, তখনও তারা ... 

তার মতো, আমার মতো

বাসভূমির ধারে সারবাঁধা চিত্তবেড়ার আহারময় পথে ব্যস্ত পানঢোড়া, তারই পাশাপাশি আমরা বাস করি, বাঁশপাতার বাঁশি ঠোঁটে ল্যাংটো শিশুটা কোনো অপরিচিত আনন্দে চোখ বদলায়, হঠাৎই দৌড়ে গিয়ে ঢিল ছুড়ে পরিচ্ছন্ন সাপটির দিকে, আসলে চোখের ভেতর অনেক রকম চোখ থাকে, আবার নতুন চোখের কথা ভেবে চিত্তপাতার মাঝবরাবর ফাটিয়ে আমিও ইচ্ছেমতো ক্লিক করেছি মনের সাইট-এ; ঘাটকূলের ধারে আকাশ থেকে একজট মিটালি সাপ আছড়ে পড়লে, বিস্ময়ে ছিটকে যেতাম দৈবশক্তির কথা ভেবে, কেমন কিলবিলিয়ে দৌড়ে যেত ওরা, ( একটি ছোটো বিজ্ঞাপন: লিখছি কবি, সবি, অপু ও নন্দুর প্রতি উপহার স্বরূপ ) শুকনো তালপাতার মতো চোখের পাতা যাদের, দুনিয়া ডটকমের উড়ানশৈলীকে অস্বীকার করেও তারা বুঝে নেয় টেলিফোনের রিং ঠিক কোন শোনপাপড়িওয়ালার ঘন্টাধ্বনির মতো, মাঝে মাঝে ভাবি, সবুজ সবুজ পাতায় লাউডগা সাপের মতো না হয়ে ...


শ্রবণশক্তিহীন সাপও যখন মাতালপ্রায় হয়ে আসে, তখন দু-একটা বৃষ্টির ফোঁটাও না হয় ঢুকে পড়ুক সর্পগন্ধা পাতার ভেতর, কথা বলুক প্রতিটি বৃষ্টি কণা, তবুও প্রতিটি কণ্ঠস্বর বুঝে নেওয়ার আগে, খুঁজে নেব   

অথবা চামচিকির ডানা

বাড়তে বাড়তে সময় ক্রমশ বেড়েই যায়, ধানের ঠোঁট ছুঁয়ে ঘুরে ফিরে কয়েকটা ছ্যাঁচড়া ফড়িং, ওদের ফোঁটা ফোঁটা চোখে আপাত পিছিয়ে আসার মতো কোনো কিছুই পিছানো নয়, তবু কাঁপা কাঁপা মেঘ সহ সদ্য রোয়া জমির ঘোলাটে জলে দ্রুত লুকোতে চাওয়া ছোট্ট কাঁকড়ির মতো ছুটে বর্ধমান লোকাল, উড়ে আসে পানকৌড়ি, ভেসে যায়, ( একটি বিজ্ঞাপন: এবং পাতার কান্না, ক.পা.-২০৫ ) তার আগেই স্পষ্ট ভেসে এসেছে তালবাগানের তালপড়ার শব্দ, ভুলে গেছি চশমার কথা, শুধু দেখি পানকৌড়ির ঘন কালো কীভাবে বিকেলটাকে তালরুটির মতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়, তখনো গান গেয়ে যায় রেডিওর আলাপন, দেখেছিস অর্ণব তোর চশমার কাচ ট্রেনের জানলা থেকে শুষে নিচ্ছিল সবুজ সবুজ গাছ, টেরা কিংবা গোঁয়ার প্লাটফর্ম, সুদূরে ঘুমিয়ে পাটের বন, চামচিকির ডানার মতো কেউ কেউ তারই পাশে রেজা ধানজমি রুয়ে নিচ্ছে দ্রুত; আর আমি আলপাশে পিঁপড়ে বাসার দিকে ...


মৃত খেজুর গাছের চুড়োর আশপাশে ছোটো ছোটো পাখিদের উড়োউড়ির মতো ঘুমিয়ে আসে কেউ, আর জমির লাল পতাকা ধরে যারা বেরিয়েছে হাঁসের খোঁজে, তারাও অস্বস্তিতে পড়ে গোবরে পা দিয়ে, আর গোবরপোকারা 

তবুও আড়াই দিন

শেষের বিন্দু বিন্দু প্রেরণাও তোমার আমার পাড়ার লোক, আমাদের চলাফেরার গা ঘেঁষে ঘুরে বেড়ায় প্রাণের কামড়; জ্বালা পিঁপড়ের লম্বা লাইনে জিভ কেটে পা রাখা খুকুর, বেখেয়ালে আভঘেটার সময় আঁতকে উঠেও পিঁক  পিঁক ক্যালকুলেট হয়ে যায় পার্বণের হিসাব; খইঢেরার আড়াইদিন পরই শাকপুজো, ব্যস্ত মা ঠাকুমারা, সাত শাকের শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে আলাদা হয়ে যায় দুপুর বিকেল সন্ধ্যা; ইস্কুল শেষে বাবু নন্দু বা মনির একপশলা বাজারখেলাকে চটকে খেতে চায় বিকেলের রোদ বা মায়ের বকুনি, কীভাবে যেন ধারাপাতও ঢুকে পড়েছে তালবোখা, কাঁচা কঞ্চিতে বানানো দাঁড়িপাল্লায়, নি:শব্দে ওজন হয়ে যায় সময়, সময়ের প্রতিচ্ছবি বা শিল্প; তসলালার ধারে ঢোলশাকের বন বুঝে নিয়েছে শিল্পের কোন শর্ত হয় না, যেনে গেছে প্রতিটি খোলামকুচির টাকায় কেনা যায় কচিকাঁচার মন, শৈশবের বেচাকেনার ভেতর ঘুরে ফিরে সাপুড়েদের ডুগডুগি আর গান, এমন দুপুর, যেখানে বিষধর সাপের পরিচয় নিতে নিতে পাড়ার মেয়েবৌরাও.....


দু-একটা কষদাঁত পারবে কি ভাজা সুশনিশাক আর পান্তা ভাতের কথোপকথন বুঝে নিতে, বুঝে নিক তার প্রেরণাও, সেসবের পাশাপাশি মুঠো মুঠো ডেনে মাছ ছড়িয়ে বেড়ায় সুস্বাদ, মুয়োনের চোখের পাতা ছুঁয়ে যে কোনো পেটমোটা ঢোড়া 

চোখে নয়, দেখা

কাউকে কাছে ডাকার আড়াল স্পর্শ করে বেঁচে থাকার আনন্দ বুঝে নিতে নিজেকে সাজিয়েছে কালিন্দীর বন, খালের জলে বেড়ে ওঠা সবুজ শরীর ছুঁয়ে উড়ে বেড়ায় প্রজাপতি, ( একটি বিজ্ঞাপন: কবির প্রতিবেশ কবিকে এভাবে কথা বলায়, আর কবি একটু অন্যভাবে নিজের মতো করে বলতে চায়, মনকে প্রশ্রয় দিয়ে নিজের মতো করে বলতে চাওয়া ভাষায় হলো কবিতার ভাষা, এইটাই ) যেটুকু ঠোঁট আকাশ পাতাল এক করে দেয়, তারই একপাশে উনান পুজো, রান্নার পর্ব সেরে এগিয়ে যায় কেউ; এখানে নালার চারপাশে বকেরা উড়ে যাবে, পানকৌড়ি এই মাঠ ছেড়েই চলে যাবে, তবুও ডেনে মাছের ঝাঁক মন ভরিয়ে দেবে কালো মেয়ের; যে আড়াল ওসামা বিন বিশ্বকে চিনিয়ে দেয়, তা কখনো স্পর্শ করে না জলের সবুজ-কালো শ্যাওলাদের, পাড়ের ঘাসে ছড়িয়ে থাকা হালকা সাদা পালক আপনমনে এগিয়ে নিয়ে মেঘেদের আলাপচারিতাকে; চোখে নয়, স্ফটিক জলের নীচে কালো কালো গেঁড়ি গুগলির আত্মরক্ষা স্পর্শ করে সবুজ জমিতে মনের আনন্দে সার ছড়ায় লাল গামছার পাগড়ি বাঁধা ......

পায়ের পাজালিতে জমা জল তাকিয়ে থাকে আকাশে উড়ে যাওয়া প্লেনের দিকে; দমদম নাকি পেন্টাগন, সেসব ইনফরমেশনস অস্বীকার করেই বেনামী ব্যাঙের আচমকা জলে লাফ, জলের কাঁপা কাঁপা ঢেউয়ে দৃশ্যের অহংকার চুরমার হয়ে